অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে ইলেকট্রিক্যাল সরঞ্জামাদির ধাতব আবরণকে প্রয়োজনীয় মাপের তারের সাহায্যে নিয়মতান্ত্রিকভাবে মাটির সাথে সংযুক্ত করার প্রক্রিয়াকে আর্থিং বলে। এছাড়া কিছু কিছু সিস্টেমকে কার্যকর করার উদ্দেশ্যে আর্থিং করা হয়(যেমন পল্লী বিদ্যুৎ)।
বৈদ্যুতিক শক বা আঘাত এবং বহু মূল্যবান যন্ত্রপাতি রক্ষা করার উদ্দেশ্যে আর্থিং করা একান্ত প্রয়োজন। আর্থ ভোল্টেজকে সাধারণত 0(শূণ্য) ভোল্ট ধরা হয়। তাই আর্থিং করা থাকলে আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার হাত থেকে সুরক্ষিত থাকি। আর্থিংকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
১। সিস্টেম আর্থিং এবং
২। ইকুইপমেন্ট আর্থিং
১। সিস্টেম আর্থিং:
ট্রান্সফর্মার বা অল্টারনেটরের নিউট্রাল পয়েন্টকে যে আর্থিং করা হয় তাকে সিস্টেম আর্থিং বলে।
২। ইকুইপমেন্ট আর্থিং:
ইলেকট্রিক্যাল ইকুইপমেন্ট বা মেশিনের বহিরাবরণের ধাতব অংশ এবং ইলেকট্রিক্যাল লাইনের সাপোর্টিং স্ট্রাকচার ইত্যাদি আর্থিং কারাকে ইকুইপমেন্ট আর্থিং বলে।
আর্থিং এর উদ্দেশ্য
১। অনাকাঙ্ক্ষিত বৈদ্যুতিক শক বা আঘাতের হাত থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে আর্থিং করা হয়।
২। বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিকে অতিরিক্ত ভোল্টেজের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আর্থিং করা হয়।
৩। শর্ট সার্কিট এবং বজ্রপাতের দরুন উৎপন্ন হাই ভোল্টেজ হতে জানমাল রক্ষা করার জন্য।
৪। আনব্যালেন্স লোডের ক্ষেত্রে নিউট্রাল লাইনকে আর্থিং করতে হয়।
যেখানে আর্থিং করতে হয়:
১। জেনারেটর বা অল্টারনেটরের নিউট্রাল পয়েন্টকে আর্থিং করা হয়।
২। 3 ফেজ চার তার ট্রান্সমিশন বা ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমে নিউট্রাল পয়েন্টকে আর্থিং করা হয়।
৩। স্টার সংযুক্ত ট্রান্সফরমারের সাধারণ বিন্দু
৪। সিঙ্গেল ফেজ তিন তার সিস্টেমের মধ্যম বিন্দু
৫। ডিসি তিন তার সিস্টেমের মধ্যম তার।
৬। সিঙ্গেল ফেজ ট্রান্সফরমারের সেকান্ডারির একটি তার আর্থিং করতে হয়।
৭। লাইটিং অ্যারেস্টর এর একটি টার্মিনাল আর্থিং করতে হয়।
৮। যে কোন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির মেটালিক ফ্রেম ও সাপোর্ট আর্থিং করতে হয়।
৯। ওভারহেড লাইনের গার্ড লাইন আর্থিং করতে হয়।
১০। কন্ডুইট ওয়্যারিং এ মেটালিক(যেমন- পাইপ) অংশ আর্থিং করতে হয়।
১১। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ইন্টারফেয়ারেন্স ফিল্ডার হিসেবে আর্থিং ব্যবহার করা হয়
১২। সার্জ সাপ্রেশনের জন্য আর্থিং ব্যবহার করা হয়।
১৩। সিঙ্গেল লাইন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমে আর্থিং নিউট্রন লাইন হিসেবে কাজ করে।
আর্থিং ইলেকট্রোড:
মাটির নিচে পুতে রাখা যে মেটালিক পাত, রড বা পাইপের সাহায্যে তারের মাধ্যমে আগত কারেন্ট মাটিতে ডিসচার্জ করা হয় তাকে আর্থিং ইলেকট্রোড বলে। আর্থিং ইলেক্ট্রোডের সাইজ বৈদ্যুতিক লোডের উপর নির্ভর করে। বিভিন্ন প্রকার আর্থিং ইলেকট্রোড আছে যা নিচে উল্লেখ করা হলো।
১। পাইপ ইলেকট্রোড
২। রড ইলেকট্রোড
৩। প্লেট ইলেকট্রোড
৪। শীট ইলেকট্রোড
৫। স্ট্রিপ বা কন্ডাক্টর ইলেকট্রোড
আর্থ রেজিস্ট্যান্স:
সাধারণভাবে আর্থিং ইলেকট্রোডের মাধ্যমে কারেন্ট প্রবাহিত হয়ে পৃথিবীতে প্রবেশ করতে যে বাধা পরিলক্ষিত হয় তাই আর্থ রেজিস্ট্যান্স নামে পরিচিত। আর্থ রেজিস্ট্যান্স পরোক্ষভাবে শূন্য পটেনশিয়াল এবং আর্থ ইলেকট্রোডের মধ্যবর্তী রেজিস্ট্যানকে বোঝায়। গাণিতিকভাবে, আর্থ রেজিস্ট্যান আর্থ ইলেকট্রোডের পটেনশিয়াল এবং আর্থিং কারেন্টের অনুপাতকে বোঝায়।
কোন আর্থিং সিস্টেমের আর্থ রেজিস্ট্যান্স নিম্নোক্ত ৪টি নিয়ামকের উপর নির্ভর করে।
(ক) আর্থিং ইলেকট্রোডের দৈর্ঘ্য বা গভীরতা:
আর্থিং ইলেকট্রোডের দৈর্ঘ্য বা গভীরতার উপর আর্থ রেজিস্ট্যান্স অনেক বেশি নির্ভরশীল। সাধারনভাবে আর্থিং ইলেকট্রোডের দৈর্ঘ্য দ্বিগুণ করলে রেজিস্ট্যান্স ৪০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তবে অনেক ক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য বা গভীরতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় না (যেমন পাথুরে অঞ্চলে)।
(খ) আর্থিং ইলেকট্রোডের ব্যাস:
আর্থিং ইলেকট্রোডের ব্যাস বৃদ্ধি করেও আর্থ রেজিস্ট্যান্স হ্রাস করা যায়। তবে দৈঘ্যের ন্যায় ব্যাস বৃদ্ধিতে রেজিস্ট্যান্সের তেমন পরিবর্তন ঘটে না। সাধারনভাবে আর্থিং ইলেকট্রোডের ব্যাস দ্বিগুণ করলে রেজিস্ট্যান্স ১০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
(গ) আর্থ ইলেকট্রোডের সংখ্যা:
আর্থ ইলেকট্রোডের সংখ্যাও বৃদ্ধি করে অর্থাৎ একাধিক আর্থ ইলেকট্রোড মেশ বা প্যারালাল করে আর্থ রেজিস্ট্যান্সের মান কমানো যায়।
(ঘ) আর্থ ইলেকট্রোডের পারিপার্শ্বিক অবস্থা:
আর্থ ইলেকট্রোডের পারিপার্শ্বিক অবস্থা যেমন- মাটির আদ্রতা, গভীরতা, সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা, মাটির ধরন, মাটির উপাদান, মাটির লবনাক্ততা ইত্যাদির উপর আর্থ রেজিস্ট্যান্স নির্ভর করে। তাই একটি আর্থিং সিস্টেম ডিজাইনের ক্ষেত্রে এসকল বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা অতি জরুরী।
তাই উপরে উল্লেখিত কারণে আর্থ রেজিস্ট্যান্স কখনোই শুন্য করা সম্ভব হয় না। তাই সিস্টেমের ধরন এবং অন্যান্য নিয়ামকের অবস্থা চিন্তা করে আর্থ রেজিস্ট্যান্স নির্ধারণ করা হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থ রেজিস্ট্যান্সের সর্বোচ্চ গ্রহনযোগ্য মান নিচের তালিকায় উল্লেখ করা হলো।
আর্থিং রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ পদ্ধতি
নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে আর্থিং রেজিস্ট্যান্স পরিমাপ করা যায়:
ভোল্টমিটার এবং অ্যামমিটার পদ্ধতি
চার বিন্দু পদ্ধতি
তিন বিন্দু পদ্ধতি
আর্থিং টেস্ট মেগার পদ্ধতি
চার বিন্দু পদ্ধতি:
বিজ্ঞানী Wenner এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন বলে তার নাম অনুসারে Wenner পদ্ধতি নামেও পরিচিত।
যেখানে
ρE = measured apparent soil resistivity (Ωm)
a = electrode spacing (m)
b = depth of the electrodes (m)
RW = Wenner resistance measured as "V/I"
এ ক্ষেত্রে a>=b/3 হলে
তিন বিন্দু পদ্ধতি
৪০০ ভোল্ট, সর্বোচ্চ ২০ কিলোওয়াটের মেশিন আর্থিঙের জন্য সাধারণত গ্যালভানাইজ্ড লোহার পাইপ ব্যবহার করা হয়।