পাওয়ার ফ্যাক্টর

No Comments


 “আসসালামুআলাইকুম, বন্ধুরা, আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজকে আমরা পাওয়ার ফ্যাক্টর সম্পর্কে আলোচনা করবো”।


১. পাওয়ার ফ্যাক্টর কি?

“পাওয়ার ফ্যাক্টর হল একটিভ পাওয়ার অর্থাৎ যে পাওয়ার আমরা ব্যবহার করতে পারি এবং এ্যপারেন্ট পাওয়ারের অনুপাত। ইহাকে cosθ দ্বারা প্রকাশ করা হয়, যার মান 0 হতে 1 পর্যন্ত। পাওয়ার ফ্যাক্টর নির্দেশ করে শতকরা কত ভাগ electricity আমরা প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করতে পারি। একটিভ পাওয়ার কিলোওয়াট (kW) এ পারিমাপ করা হয় এবং এ্যাপারেন্ট পাওয়ার ভোল্ট-অ্যাম্পিয়ার(KVA)এ পরিমাপ করা হয়।

একটিভ পাওয়ার (kW)=VIcosθ, 

এ্যপারেন্ট পাওয়ার (kVA)=VI

পাওয়ার ফ্যাক্টর, cosθ =kW/kVA, 

এখানে θ হল কারেন্ট ও ভোল্টেজের মধ্যবর্তী কোণ।


(Power Factor - P.F): ভোল্টেজ ও কারেন্টের মধ্যবর্তী কোসাইন কোণ (Cosϴ) কে পাওয়ার ফ্যাক্টর বলে৷ অন্যভাবে বলা যায়- রেজিস্ট্যান্স এবং ইম্পিড্যান্স এর অনুপাত অথবা প্রকৃত শক্তি (Real Power) এবং আপাত শক্তির (Apparent Power) অনুপাতকে পাওয়ার ফ্যাক্টর (P.F) বলে৷

ইহার কোন একক নাই, শতকরা (%) হিসাবে প্রকাশ করা হয় ৷সঠিক পাওয়ার ফ্যাক্টর (p.f) এর মান জানা না থাকলে, হিসেব করার সময় আদর্শ মান হিসেবে পাওয়ার ফ্যাক্টর ৮০% ধরে অর্থাৎ p.f = 0.8 (ল্যাগিং) ধরে হিসাব করা হয়৷


২.***পাওয়ার ফ্যাক্টর তিন প্রকার***

যথা-

• ল্যাগিং পাওয়ার ফ্যাক্টর (Lagging Power Factor)

• লিডিং পাওয়ার ফ্যাক্টর (Leading Power Factor)

• ইউনিটি পাওয়ার ফ্যাক্টর (Unity Power Factor)


#ল্যাগিং, লিডিং এবং ইউনিটি পাওয়ার ফ্যাক্টর বলতে কি বোঝায়?


(a)লিডিং পাওয়ার: লিডিং পাওয়ার ফ্যাক্টর হল যখন কারেন্ট ভোল্টেজ এর থেকে এগিয়ে থাকে। যেমনঃ ৯০ ডিগ্রী লিডিং পাওয়ার ফ্যাক্টর বলতে বোঝায় কারেন্ট ভোল্টেজের সাপেক্ষে ৯০ ডিগ্রী এগিয়ে আছে।

মনে রাখার সহজ উপায়:

I C E

কারেন্ট(I) ক্যাপাসিটর(C) ই.এম.এফ.(E)

C তে ক্যাপাসিটিভ সার্কিট, E তে ই.এম.এফ., I তে কারেন্ট।

ক্যাপাসিটিভ সার্কিটে কারেন্ট আগে, ভোল্টেজ পরে।


(b)ল্যাগিং পাওয়ার: ল্যাগিং পাওয়ার ফ্যাক্টর হল যখন কারেন্ট ভোল্টেজ এর থেকে পিছিয়ে থাকে। যেমনঃ ৯০ ডিগ্রী ল্যাগিং পাওয়ার ফ্যাক্টর বলতে বোঝায় কারেন্ট ভোল্টেজের সাপেক্ষে ৯০ ডিগ্রী পিছিয়ে আছে।

মনে রাখার সহজ উপায়:

E L I


ই.এম.এফ.(E) ইন্ডাক্টর(L) কারেন্ট(I)

L তে ইন্ডাকটিভ সার্কিট, E তে ই.এম.এফ., I তে কারেন্ট।

ইন্ডাকটিভ সার্কিটে ভোল্টেজ আগে, কারেন্ট পরে।


(c)ইউনিটি পাওয়ার ফ্যাক্টর :যখন কোন সার্কিট রেজিস্টিভ সার্কিটের ন্যায় আচরন করে, তখন উক্ত সার্কিটের পাওয়ার ফ্যাক্টরকে ইউনিটি পাওয়ার ফ্যাক্টর বলে। এ অবস্থায় কারেন্ট ও ভোল্টেজের মধ্যে কোন কৌণিক ব্যবধান থাকেনা, অর্থাৎ কারেন্ট ও ভোল্টেজ ইনফেজে থাকে।


“যদি লোড Capacitive হয় তাহলে পাওয়ার ফ্যাক্টর লিডিং হয় আর যদি লোড Inductive হয় তাহলে পাওয়ার ফ্যাক্টর ল্যাগিং হয়। লোড Resistive হলে পাওয়ার ফ্যাক্টর Unity হয়, অর্থাৎ 'এক'” ।


৩. পাওয়ার ফ্যাক্টর ৮০% বলতে কি বুঝ? 

পাওয়ার ফ্যাক্টর ৮০% অর্থাৎ Cosθ= ০.৮ বলতে বুঝি ১০০ kVA সাপ্লাই পাওয়ার হলে ৮০ কিলোওয়াট একটিভ পাওয়ার পাওয়া যাবে। পাওয়ার ফ্যাক্টর লোড এর উপর র্নিভর করে।


৪.পাওয়ার ফ্যাক্টর এর মান কম হলে সিস্টেমে কি অশুবিধা হয়?

কোন এসি সার্কিটের পাওয়ার ফ্যাক্টর যে হারে কমতে থাকে, সার্কিট দিয়ে প্রবাহিত কারেন্টের পরিমান ও সেই হারে বাড়তে আরাম্ভ করে। এতে সরবরাহ লাইনের পরিবাহী আর জেনারেটর, ট্রান্সফরমার প্রভৃতি মেশিনে উত্তাপজনিত বৈদ্যুতিক শক্তির অপচয় বহুগুণে বেড়ে যায়। কারন, কোন পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহের ফলে সেই পরিবাহী গরম হয়ে যে পরিমান তড়িৎ শক্তির অপচয় ঘটায় তাহা তড়িৎ প্রবাহের বর্গফলের সমানুপাতিক হয়।


শক্তির অপচয়ের এই বৃদ্ধিতে সরবরাহ লাইনের এবং জেনারেটর, ট্রান্সফরমার প্রভৃতি মেশিনের কর্মদক্ষতা অনেকখানি কমে যায়। তাছাড়া মেশিনগুলিও অপেক্ষাকৃত অল্প সময়ের মধ্যে কাজের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এতে সরবরাহকারী আর গ্রাহক উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হন।

সরবরাহ লাইন দিয়ে যখন কারেন্ট প্রবাহিত হয় তখন লাইনে ভোল্টেজ ড্রপ হয়। লাইনের ইম্পিডেন্স কে কারেন্ট দিয়ে গুন করলে যত হয়, ভোল্টেজ ড্রপের পরিমান ঠিক তত ভোল্ট হয়। সুতারাং পাওয়ার ফ্যাক্টর কমে যাওয়ার ফলে লাইন দিয়ে যখন অপেক্ষাকৃত বেশি কারেন্ট প্রবাহিত হতে থাকে, তখন স্বাভাবিক কারনেই লাইনে ভোল্টেজ ড্রপের পরিমান বৃদ্ধি পায়, আর সেই সঙ্গে লোড সার্কিটের টার্মিনাল ভোল্টেজ কমে যায়। এতে কেবল মাত্র যে, আলো গুলি কম জোরে জ্বলে বা পাখা গুলি আস্তে আস্তে ঘোরে তাই নয়, লোড সার্কিটে যে সমস্ত বৈদ্যুতিক মোটর লাগানো থাকে, সেই গুলি বিশেষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

এইসব কুফল দেখা দেয় বলেই এসি সার্কিটে পাওয়ার ফ্যাক্টরের অবনতি ঘটলে তার মান উন্নত করা একান্ত ভাবে আবশ্য ।


“পাওয়ার ফ্যাক্টর এর মান কম হলে অনেক বেশি আয়তনের পরিবাহীর প্রয়জন হয়, লাইন লস বৃদ্ধি পাওয়ায় সিস্টেমের দক্ষতা কমে যায় , প্রাথমিক খরচ বেড়ে যায় তাই পার ইউনিট কষ্ট বেশি হয়”।


৫.পাওয়ার ফ্যাক্টর কারেকশন কি এবং কিভাবে করা হয়?

পাওয়ার ফ্যাক্ট্রর Correction বলতে আমরা সহজে বুঝি কোন একটা সিস্টেমে Reactive পাওয়ার এর পরিমান কমিয়ে Active পাওয়ার এর পরিমান বাড়ানো। আমরা সাধারনত ক্যাপাসিটর ব্যাংক অথবা সিংক্রোনাস মোটর ব্যবহার করে পাওয়ার ফ্যাক্টর Correction ও improve করে থাকি। ইন্ডাস্ট্রিতে Capacitor Bank ব্যবহার করে পাওয়ার ফ্যাক্টর Correction করা হয়। আমরা এক যায়গায় বড় ক্যাপাসিটর ব্যাংক ব্যবহার না করে প্রত্যেক লোডে ক্যাপাসিটর ব্যাংক ব্যবহার করতে পারি। অথবা যে সব লোড লো পাওয়ার ফ্যাক্টর এর জন্য দায়ী সে সব লোড এর ব্যবহার কমিয়েও পাওয়ার ফ্যাক্টর ইমপ্রভ করতে পারি।


৬. এসি সিরিজ সার্কিটে রেজোন্যান্স অবস্থায় পাওয়ার ফ্যাক্টর এর মান কত? কেন?

এসি সিরিজ সার্কিটে রেজোন্যান্স অবস্থায় পাওয়ার ফ্যাক্টর এর মান ইউনিটি বা 1 হয় । 

এসি সিরিজ সার্কিটে রেজোন্যান্স অবস্থায় ইন্ডাকটিভ রিয়াক্ট্যান্স (XL) এবং ক্যাপাসিটিভ রিয়াক্ট্যান্স (XC)সমান (XL = XC) হয়। এ অবস্থায় মোট ইম্পিড্যান্স Z = R+ J(XL-XC) = R হয়। তখন পাওয়ার ফ্যাক্টর, Cosθ= R/Z = R/R = 1 হয়। আবার θ = Cos-1 1 = 00 হয় অর্থাৎ রেজোন্যান্সের সময় সার্কিটের কারেন্ট ও ভোল্টেজের মধ্যে ফেজ কোন শুন্য হয় অর্থাৎ পাওয়ার ফ্যাক্টর ইউনিটি হয়।


৭. অর্থনৈতিক পাওয়ার ফ্যাক্টর কাকে বলে?

পাওয়ার ফ্যাক্টর যে মানে উন্নিত করলে বাৎসরিক সর্বোচ্চ সাশ্রয় হয়, উক্ত পাওয়ার ফ্যাক্টরকে সর্বোত্তম পাওয়ার ফ্যাক্টর বলে।